How to search Land Purchase Deed in Bangladesh
জমির দলিল হারিয়ে গেলে বা খুঁজে না পেলে তা পুনরুদ্ধারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে জমির দলিল পুনরায় সংগ্রহ করা সহজ হবে। এখানে বিস্তারিতভাবে দুটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো, যার মাধ্যমে আপনি দলিল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
প্রথম পদ্ধতি: তিনটি ধাপ অনুসরণ করুন
ধাপ ১: জমির দাগ নম্বর জানুন এবং নিশ্চিত করুন
- প্রথমে আপনার জমির সঠিক দাগ নম্বরটি জানুন।
- আপনি যেটি জানেন সেটি কি CS (Cadastral Survey), RS (Revisional Settlement), না BS (Bangladesh Survey) দাগ, তা নিশ্চিত করুন।
- জমির প্রকৃতি এবং দাগের ধরন অনুযায়ী আপনি স্থানীয় ভূমি অফিস বা তফসিল অফিস থেকে এই তথ্য পেতে পারেন।
ধাপ ২: খতিয়ান নম্বর সংগ্রহ করুন
- দাগ নম্বর জানার পর, জমির খতিয়ান নম্বর সংগ্রহ করুন।
- খতিয়ান নম্বরটি আপনি আপনার ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তফসিল অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
- খতিয়ান নম্বর পাওয়ার পর, এটিকে খতিয়ানের মাধ্যমে চেক করুন যে সেখানে নামজারি বা খারিজ করা হয়েছে কিনা।
ধাপ ৩: নামজারি বা খারিজের তথ্য থেকে দলিল নম্বর সংগ্রহ করুন
- খতিয়ানে যদি নামজারি বা খারিজ করা থাকে, তাহলে দেখুন সেটি কার নামে করা হয়েছে।
- জমির নামজারি বা জমাভাগের কেস বা নথি বের করে নিন। এই নথিতে সাধারণত দলিল নম্বর উল্লেখ থাকে।
- দলিল নম্বর সংগ্রহের পর, নকল বা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করুন।
কোথায় আবেদন করবেন:
- যদি আপনার জমির দলিলটি সাম্প্রতিক ৫-৬ বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
- তবে যদি দলিলটি অনেক পুরনো হয়, তাহলে আপনাকে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের জেলা রেকর্ড রুম থেকে দলিলের নকল সংগ্রহ করতে হবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: দলিলের সঠিক নম্বর বা তথ্য না পেলে দলিল তল্লাশি বা সার্চ করুন
যদি প্রথম পদ্ধতি অনুসরণ করেও দলিলের সঠিক নম্বর বা তথ্য না পাওয়া যায়, তবে আপনাকে দলিল তল্লাশি বা সার্চ করতে হবে। দলিল তল্লাশির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রয়োজন হবে।
তল্লাশি বা সার্চ করতে যা যা লাগবে:
- সম্ভাব্য সাল: দলিলটি কোন সালের হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
- দলিল দাতা ও গ্রহীতার নাম: দলিলের মূল মালিক ও ক্রেতার নাম জানুন।
- দলিল দাতা ও গ্রহীতার বাবার নাম: জমির দলিলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাবার নামেরও প্রয়োজন হতে পারে।
- দাগ নম্বর ও মৌজার নাম: জমির দাগ নম্বর ও মৌজার নাম জানতে হবে।
জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয়:
জমির দলিল হারিয়ে গেলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। হারানো দলিল পুনরুদ্ধারের জন্য করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করলে তা ফিরে পাওয়া সহজ হবে। অনেক সময় অসাবধানতা, দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দলিল হারিয়ে যেতে পারে। যেমন, আগুনে পুড়ে যাওয়া, বন্যার কারণে নষ্ট হওয়া বা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দলিল পুনরুদ্ধারের জন্য পুলিশ এবং প্রশাসনের সহায়তা নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
- সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন: যদি আপনার জমির দলিল হারিয়ে যায়, তবে প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।
- পুলিশের সহযোগিতা নিন: জিডি করার পর পুলিশ আপনাকে জিডির একটি কপি এবং একটি নম্বর প্রদান করবেন, যা আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। পুলিশের সহায়তায় আপনি নতুন দলিল বা নকল কাগজপত্র পেতে পারেন।
- প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ করুন: পুলিশ তদন্ত শেষ করার পর, তারা হারানো কাগজপত্র পুনরায় তৈরি বা নকল কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করবেন।
উদাহরণ:
ধরুন, আপনার বাবা আজিজ পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ১৬ বিঘা জমির মালিক ছিলেন এবং ২ বছর আগে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসেবে দুই সন্তান আছেন: এক পুত্র আব্দুল হক প্রামাণিক ও এক কন্যা সেলিনা বেগম। আপনার বাবার নামীয় সি.এস খতিয়ান, এসএ এবং আরএস খতিয়ান এবং আপনার দাদা (পিতামহ) এর নামের দলিলগুলোর ফটোকপি আপনার কাছে থাকলেও মূল কাগজপত্র হারিয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে, আপনি ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে গিয়ে সি.এস, এসএ এবং আরএস খতিয়ানের জাবেদা নকলের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া, আপনার দাদা (পিতামহ) এর নামীয় দলিলের জাবেদা নকল ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। দলিলের ফটোকপি দেখে দলিল নম্বর অনুসারে আবেদন করলে জাবেদা নকল পেতে সহজ হবে।
দলিলের নকল (Certified Copy) প্রাপ্তির নিয়মাবলী:
রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ৫৭(১) ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করে যে কেউ স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিলের সার্টিফাইড কপি পেতে পারেন। এই আইনের ৬২ ধারার বিধানাবলি মেনে নকল বা সার্টিফাইড কপি প্রদান করা হয়।
দলিলের নকল প্রাপ্তির ধারা:
- ৫৭(১) ধারা: প্রয়োজনীয় ফিস পরিশোধ সাপেক্ষে, যেকোনো ব্যক্তি স্থাবর সম্পত্তির দলিলের রেজিস্টার বহি পরিদর্শন করতে পারেন এবং নকল কপি গ্রহণ করতে পারেন।
- ৫৭(২) ধারা: দলিল সম্পাদনকারী ব্যক্তি বা তার এজেন্ট, মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা উইল বা অছিয়ত দলিলের নকল নিতে পারেন।
- ৫৭(৩) ধারা: দলিলের সম্পাদনকারী বা দাবীদার ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি, ৪ নম্বর নিবন্ধিত বহির বিষয়ের নকল পেতে পারেন।
- ৫৭(৪) ধারা: ৩ এবং ৪ নম্বর নিবন্ধিত বহিতে লিখিত বিষয়ের তল্লাশি সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে করা যেতে পারে।
কিভাবে দলিল তল্লাশি করবেন?
মূল দলিল থাকলে:
- যদি আপনার কাছে মূল দলিল থাকে, তবে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় নকলের তথ্য উল্লেখ করা থাকে। দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় “দলিলটি কোন সালের, কোন নম্বর বালাম বইয়ের, কত পৃষ্ঠা থেকে কত নম্বর পৃষ্ঠায় নকল করা হয়েছে” এই তথ্যগুলো থাকে, যা সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়। এই তথ্যের মাধ্যমে আপনি সহজেই রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের নকল পেতে পারেন।
মূল দলিল না থাকলে:
- যদি মূল দলিল না থাকে, তবে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রির পর দলিলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে সূচিবহি তৈরি করা হয়। একটি সূচিবহি জমির দাতা/বিক্রেতা, গ্রহিতা/ক্রেতা বা অন্যান্য পক্ষের নাম দিয়ে তৈরি হয়। অন্য একটি সূচিবহি জমির মৌজার নাম দিয়ে তৈরি হয়। এই সূচিবহি থেকে তল্লাশি করে আপনি দলিলের নকল সংগ্রহ করতে পারেন।
দলিল তল্লাশ ও নকল প্রাপ্তির আবেদন:
রেজিস্ট্রেশন বিধিমালা, ২০১৪-এর ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সূচিবহি তল্লাশ ও দলিলের নকলের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রথমে ৩৬ নম্বর ফরম অনুযায়ী তল্লাশ ও পরিদর্শনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর ৩৭ নম্বর ফরমে নকলের জন্য আবেদন দাখিল করতে হবে।
এভাবে ধাপে ধাপে কাজ করলে আপনার হারানো জমির দলিল সহজেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।